Saturday, March 12, 2022

বাংলাদেশ কেন রাশিয়ার কাছে চির কৃতজ্ঞ - Russia's contribution to the liberation war of Bangladesh in 1971


1971
, 3 ডিসেম্বর যখন ভারত মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে লড়তে সম্মত হয়েছে । তখন মার্কিন নৌ-বহর রওনা দিয়েছে পাকিস্তানের পক্ষে লড়তে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ।


তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রাশিয়া ও তাদের নিয়ে নৌ-বহর রওনা হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লড়তে।আমেরিকা যদি পাকিস্তানের পক্ষে এ যুদ্ধে অংশ নেয় বাংলার মুক্তিকামী মানুষের সাথে যুদ্ধে অংশ নেবে  রাশিয়া । এর ফলে পিছু হটতে বাদ্য হল আমেরিকা
। 


 বর্তমান বিশ্বের সবথেকে বড় দুই প্রতিদ্বন্দ্বি , সব ব্যাপারে একে অন্নের  মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায় । কিন্তু এই প্রতিদ্বন্দ্বি এক হয়েছিল আজ থেকে 51 বছর আগে ১৯৭১ সালে দুই পরাশক্তি অবস্থান নিয়েছিল  সদ্য জন্ম হওয়া বাংলাদেশের বিপক্ষে । পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে  তাদের গণহত্যার বর্বরতাকে সমর্থন করেছিল ।

 

           


 
তখন ভারতের পাশাপাশি একমাত্র যে বৃহৎ শক্তি বাংলাদেশের সমর্থন করেছিল তার নাম সভিয়েত ইউনিয়ন  , বর্তমান সময়ে রাশিয়া । যে  রাশিয়াকে গালাগালি করছেন যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কে যুদ্ধবাজ বলে অভিহিত করছেন । সে রাশিয়া একাত্তরের নিরীহ বাঙ্গালীদের সমর্থন দিয়েছিল

 

আমেরিকার সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগর অভিমুখে যাত্রা করেও শেষমেশ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিল শুধুমাত্র রাশিয়ার ভয়ে । চীন এবং আমেরিকার দুই দেশের সাথে পাকিস্তানের ছিল মিত্রতা ।  


তারা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করে । অন্যদিকে রাশিয়া ছিল ভারতের বন্ধুরাষ্ট্র ,তাই ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতি রাশিয়ার অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল ।   

মূলত এশিয়া ভূখণ্ডে ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রভাব বাড়তে রাশিয়া বাংলাদেশকে সমর্থন করেছিল । তারা চেয়েছিল পাকিস্তানের পরাধিনতা থেকে বেরিয়ে স্বাধীন একটি দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক বাংলাদেশ 






আর তাই
25 শে মার্চ পাকিস্তানীরা যখন  গণহত্যা লুটপাট অগ্নিসংযোগ রোগ নারী ধর্ষণের মতো ধ্বংসযজ্ঞের লিপ্ত হয় তখন সভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে অত্যাচার বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেন ।তিনি  নির্বাচিত করা প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর অনুরোধ যানান । 



রাশিয়ার  জনসাধারণ ও বাংলাদেশের মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল , তাছাড়া সে দেশের পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশের উপর নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয়েছিল নিয়মিত এর মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি হয়েছিল ।




 বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ইয়াহিয়ার সাথে বন্ধুত্ব ছিল তার খুবই গভীর , এই কারণে যখন ভারতের পাশাপাশি সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সমর্থন করতে লাগলো তখন তার প্রশাসন আমেরিকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত তলব করে মোটামুটি শাসিয়েছিল, বলেছিলেন পাকিস্তান বিষয়টা নিয়ে সভিয়েত যা করছে তাতে আমেরিকার সাথে তাদের  সম্পর্ক  আরও খারাপ হতে পারে । দেশটির সরকার নিক্সনে একচোখা নীতিতে কান না  দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে থেকেছেন সবসময়। 

১৯৭১
সালের নভেম্বরে জুলফিকার আলী ভুট্টো চীনে কাছে একটা বিষয়ে সাহায্য চাইলেন অনুরোধ করলেন তাঁরা যেন ভারতের উত্তর সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি করে ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে হালকা সংঘর্ষে লিপ্ত হয় কিন্তু সেই অনুরোধ রাখেনি চীন এই সভিয়েত ইউনিয়নের ভয়ে। জেহেতু  সভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের সঙ্গে আছে , তাই চীন সেখানে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে বিপদে পড়তে চাইনি । এর আগে সভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে এক সংঘর্ষে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল । সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে চীন পাকিস্তান কে সরাসরি সাহায্য করার সাহস পায়নি । 

 

মুক্তিযুদ্ধের ৩ ডিসেম্বর ভারত যখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যুক্ত হয় সেই সময় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দেয় আমেরিকা , তাতে চীন সমরথন দেই । পাকিস্তান যখন শোচনীয় পরাজয় দ্বারপ্রান্তে তখন পাকিস্তান রক্ষার জন্য এটি ছিল আমেরিকা এবং চীন এর চাল । 

 

নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন । তারা সেই প্রস্তাবে ভেটো দেয় তাই প্রস্তাবটি অকার্যকর হয় । যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হলে 16 ডিসেম্বর একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারতোনা বাংলাদেশ । 

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হলে যুদ্ধ আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আরো দিরঘায়ত হত । রাশিয়ার সমরথন এর কারনে আমাদের মুক্তি যুদ্ধ জোরদার হয়েছে । যুদ্ধ চলাকালীন সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশি শরণার্থীদের নগদ টাকা এবং অস্ত্রশস্ত্র হতে সাহায্য করেছিল । 

রাশিয়ার মানুষজন ফান্ডিং এর মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা পাঠিয়ে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গে । সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান না করতো তাহলে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়  আরও কঠিন হত । 

 



 নিক্সন প্রশাসন তাদের বন্ধুরাষ্ট্রের ভাঙ্গন মেনে নিতে পারছিল না তাই  ইয়াহিয়ার অনুরোধে টাস্কফোর্স গঠন করে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশ্যে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ও পারমাণবিক অস্ত্র ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে  রাশিয়ান নেভি দুটি পারমাণবিক শক্তিধর নউবহর পাঠায় টাস্কফোর্স  74 কে অনুসরণ করতে । 

 

সভিয়েত ইউনিয়নের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট আমেরিকা যদি সরাসরি নাক গলাই তারাও ছেড়ে কথা বলবে না। 


শুধু স্বাধীনতার আগে নাই যুদ্ধে জয় লাভ করে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ এরপরেও রাশিয়া সব সময় সমর্থন দিয়ে গেছে বাংলাদেশকে । লম্বা সময় ধরে আমেরিকা এবং চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি মুসলিম রাষ্ট্রগুলো স্বীকৃতি ও মিলছিলনা ।  বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার এক মাস পরেই বাংলাদেশকে আরো সালে স্বীকৃতি দিয়েছিল  রাশিয়া । মুক্তিযুদ্ধের যোগাযোগব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বোমায় উড়ে গিয়েছিল ব্রিজ-কালভার্ট সেতু বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক করতে সাহায্য করেছিলেন রাসিয়া ।

  

১৯৭৫ সালের 15 আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তখন প্রথমে যে রাষ্ট্রে নিন্দা জানিয়েছিল, প্রতিবাদ করেছিল সে বর্তমানের রাশিয়া । বাংলাদেশের প্রত্যেক রাষ্ট্রই বন্ধু বাৎসল্য বজায় আছে এখনো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে সবথেকে বড় উদাহরন হিসেবে ধরা যায়।




নিজেদের টাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৯০ % টাকা এসেছে রাশিয়া রিন থেকে । এবং সেই টাকার পরিমাণ হচ্ছে 12 বিলিয়ন মার্কিন ডলার । বাংলা টাকায় যেটা এক লাখ 14 কোটি টাকা । এটির নির্মাণ করছে রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটম 2024 সালে নির্মাণ শেষ সেখান থেকে উৎপাদিত হবে 24 মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ইতিমধ্যে নরসিংদী ঘোড়াশালে সাড়ে 400 মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া রাশিয়া।সময়ের সাথে সাথে রাশিয়া সরকারের পরিবর্তন এসেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেছে তারা দুর্বল হয়েছে আগের থেকে। কিন্তু  বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের নীতিতে পরিবর্তন আসেনি ।



এই বন্ধুত্বের প্রতিদান হিসেবে জাতিসংঘে ইউক্রেন রাশিয়া ইস্যুতে ভোটদান থেকে বিরত থাকছে বাংলাদেশ কারণ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাওয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয় নীতিগতভাবে উচিত নয় যে রাষ্ট্র আমাদের জন্ম যুদ্ধে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের প্রতি যে আমাদের হৃদয়ের জায়গা থাকবে সব সময় তাতে অবাক হবার কিছু নেই ।অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন রাশিয়া কেবল তাদের স্বার্থের জন্য এই এলাকায় আমেরিকা চীনের আধিপত্যকে কমাতে তারা চেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা । তাহলেও আমাদের আপত্তি নেই প্রায় 90% মুসলমানের তৎকালীন বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের কোন মুসলমান দেশ সাপোর্ট করেনি, পাকিস্তানের পরামর্শে গণহত্যা হিংস্রতা নীরব থেকেছে সেখানে যদি রাশিয়া সাপোর্ট করে আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হতে সাহায্য করে তাতে বিন্দু পরিমাণ কৃতজ্ঞতাবোধ অন্তত একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমার কমবে না ।


No comments: